কানামাছি: বাংলার সব অঞ্চলেই প্রচলিত। উঠানের খোলা
জায়গায় ছোট ছেলে-মেয়েরা আলাদাভাবে বা একত্রে এ খেলা খেলে থাকে। এ খেলায় প্রথমে
কাপড় দিয়ে একজনের চোখ বাঁধা হয়; সে হয় ‘কানা’। অন্যরা ‘মাছি’র মতো চারদিক থেকে
ঘিরে তার গায়ে মৃদু টোকা দেয়, আর মুখে ছড়া বলে: ‘কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ।’
চোখবাঁধা অবস্থায় সে তাদের একজনকে ধরার চেষ্টা করে। এ সময় সেও
ছড়া কাটে: ‘আন্ধা গোন্ধা ভাই, আমার
দোষ নাই।’ সে যদি কাউকে ধরতে পারে তাহলে পরবর্তী খেলায়
তাকে কানা সাজতে হয়। কানামাছি খেলার এটাই নিয়ম। খেলাটি সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং ছড়া
আবৃত্তির সঙ্গে ক্রীড়াভিনয়ে এর প্রকৃত আনন্দ ও আকর্ষণ নিহিত।....
কানামাছি খেলাটি ‘ব্লাইন্ড বি’ নামে ইউরোপেও প্রচলিত। দাস-প্রথায় অপরাধীর অন্যতম শাস্তি ছিল চক্ষু
তুলে অঙ্গহানি করা; পরে তাকে শারীরিকভাবে উত্যক্ত করা
হতো। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কানামাছি খেলার উদ্ভবে অতীতের
সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার ছায়াপাত ঘটে থাকতে পারে। ল্যাংচা অনুরূপ আরেকটি খেলা যেখানে একজনকে এক
পা গুটিয়ে অপর পায়ের সাহায্যে লাফিয়ে লাফিয়ে খেলার সঙ্গীদের ধরতে হয়।
পাশ্চাত্যে এটি ‘লেম্ম্যান’
নামে প্রচলিত। এ খেলায়ও পা কেটে অপরাধীকে শাস্তি প্রদানের অতীত
প্রথার ছায়াপাত আছে।