বাক্সেটবল

বাস্কেটবল

বাস্কেটবল : বাস্কেটবল খেলা প্রথম শুরু হয় আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসে ১৮৮১ সালে। এ  খেলার জনক হলেন আমেরিকার প্রিংফিল্ড ওয়াই এম.সি এ কলেজের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক ডা. জেমস নেইস্মিথ। প্রথমে একদলে ১০/১৫ জন করে খেলায় অংশ নিত। ১৮৯৪ সাল থেকে ৫ জন করে একদলে খেলার নিয়ম চালু হয়। বাংলাদেশে প্রথম খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলগুলোতে যেমন- ঢাকার সেন্ট গ্রেগরী, সেন্ট জোসেফ ও চট্টগ্রামের সেন্ট প্লাসিড এবং  অন্যান্য মিশনারি স্কুলগুলোতে বাস্কেটবল খেলা শুরু হয়। এ খেলাতে প্রচুর দমের প্রয়োজন হয়।
বাস্কেটবল খেলার নিয়মাবলি...
১. কোর্ট : বাস্কেটবল খেলার কোর্ট হবে আয়তাকার, মেঝে হবে শক্ত ও সমতুল্য এবং বাধামুক্তহীন জাতীয় ও আঞ্চলিক খেলার কোর্টের দৈর্ঘ্য হবে ২৬ মি. এবং প্রস্থ ১৪ মিটার। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য কোর্টের দৈর্ঘ্য হবে ২৮ মিটার ও প্রস্থ হবে ১৫ মিটার।
২. কোর্টের বৃত্ত : কোর্টের মাঝে ৩ টি বৃত্ত আছে। প্রত্যেকটির ব্যাসার্ধ ১.৮০ মিটার।
৩. সংরক্ষিত এলাকা : এন্ডলাইনের মধ্যবিন্দু থেকে উভয় দিকে ১.৮০ মিটার করে নিয়ে দুটি চিহ্ন দিতে হবে। এন্ড লাইনের মাঝ থেকে সামনের দিকে ৫.৮০ মিটার নিয়ে উভয় দিকে ১.৮০ মিটার নিয়ে ৩.৬০ মিটার দাগের দুই মাথা বরাবর দাগ টানতে হবে। এই দাগের ভেতরের জায়গাকে সংরক্ষিত এলাকা  বলে।
৪. রিং : কোর্ট থেকে রিং এর উচ্চতা ৩.০৫ মি. বোর্ড থেকে ১৫ সে.মি দূরে রিং লাগানো হয়। রিং এর ব্যাসার্ধ ৪৫ সে.মি। রিং এর সাথে নেট লাগানো থাকবে যার দৈর্ঘ্য হবে ৪০ সে.মি।
৫. বল : বলের আকৃতি হবে গোলাকার। ওজন ৫৬৭ গ্রাম থেকে ৬৫০ গ্রাম পর্যন্ত, পরিধি ৭৪.৯-৭৮ সে.মি। বলের উপরে ৮টি প্যানেল থাকবে। বলের রং হবে কমলা। উপরি ভাগ খসখসে।
৬. খেলার সময় ৪০ মিনিট। চারভাগে খেলা হয়। প্রতিভাগে ১০ মিনিট করে। ১ম ও ২য় পর্বের এবং ৩য় ও ৪র্থ পর্বের মাঝে বিরতি ২ মিনিট। খেলার মাঝে বিরতি ১৫ মিনিট।
৭. পয়েন্ট : ৬.২৫ মিটার দাগের বাইরে থেকে স্কোর হলে ৩ পয়েন্ট। ৬.২৫ মিটার দাগের ভেতর থেকে স্কোর হলে ২ পয়েন্ট। ফ্রি থ্রো থেকে স্কোর ১ পয়েন্ট।
৮. খেলা শুরু : টসের মাধ্যমে কোনো দল কোন বাস্কেটে গোল করবে তা নির্ধারণ করতে হবে। পরে কোর্টের মাঝে বৃত্তের দুই দলের দুই জন খেলোয়াড় দাঁড়িয়ে থাকবে। রেফারি মাঝে দাঁড়িয়ে বল শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে খেলা শুরু করবেন।
৯. ৩ সেকেন্ড রুল: যে দলের খেলোয়াড় বল নিয়ন্ত্রণ করছে সেই দলের কোনো খেলোয়াড় সংরক্ষিত এলাকায় বল ছাড়া ৩ সেকেন্ডের বেশি সময থাকতে পারে না। এমনকি দাগও স্পর্শ করতে পারে না।
১০। ৫ সেকেন্ড রুল :
ক. রেফারির সংকেতের পর ৫ সেকেন্ডের ভেতর বল থ্রো করতে হবে।
খ. ৫ সেকেন্ডের বেশি সময় কেউ বল ধরে রাখতে পারবে না।
গ. দুই দলের খেলোয়াড় ৫ সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে টানাটানি করতে পারবে না।
ঘ. বল ধরার পর ৫ সেকেন্ডের ভেতর বল ড্রিবল বা পাস করতে হবে।
১১. ৮ সেকেন্ড রুল : নিজেদের কোর্টে বল ৮ সেকেন্ড পর্যন্ত আয়ত্ত্বে রাখা যায়। ৮ সেকেন্ডের ভেতর বিপক্ষের কোর্টে বল নিতে হবে।
১২. ২৪ সেকেন্ড রুল : একটি দলের সমস্ত খেলোয়াড় মিলে ২৪ সেকেন্ড পর্যন্ত বল আয়ত্ত্বে রাখতে পারবে।
১৩. ভায়োলেশন : খেলার নিয়ম ভঙ্গ করা যেমন ব্যক্তিগত ফাউলের সময় হাত না তোলা, ৩, ৫, ৮ সেকেন্ডে রুল ভঙ্গ করা ইত্যাদি।
১৪. টেকনিক্যাল ফাউল : অফিসিয়ালদের বিরুদ্ধে অবজ্ঞা প্রদর্শন করলে ইচ্ছাকৃতভাবে বারবার নিয়মভঙ্গ করে অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ করলে।
১৫. ব্যক্তিগত ফাউল : বল খেলার সময় বা ডেড অবস্থায় বিপক্ষ খেলোয়াড়ের সাথে অবৈধ কায়িক সংঘর্ষ হলে তাকে ব্যক্তিগত ফাউল বলে।
১৬. ইচ্ছাকৃত ফাউল : কোনো খেলোয়াড় ইচ্ছাকৃতভাবে বিপক্ষের কোনো খেলোয়াড়কে ফাউল কররে ইচ্ছাকৃত ফাউল হয়।
১৭. ডাবল ফাউল : দুই দলের খেলোয়াড় একই সাথে একে অপরের বিরুদ্ধে ফাউল করলে যে অপরাধ হয় তাকে ডাবল ফাউল বলে।
১৮. ফাইভ ফাউল : ৪০ মিনিটের খেলায় কোনো খেলোয়াড় ব্যক্তিগত ও টেকনিক্যাল সর্বমোট ৫ টি ফাউল করলে তাকে অবশ্যই কোর্ট ত্যাগ করতে হবে।
১৯. সেভেন ফাউল : দলীয়ভাবে কোনো দল প্রতি অর্ধে ৭টি ব্যক্তিগত বা টেকনিক্যাল ফাউল করলে এবং ৪ X ১০ মিনিটের খেলায় প্রতি পর্বে ৪টি ব্যক্তিগত ও টেকনিক্যাল ফাউল করলে পরবর্তী ফাউলের জন্য ২টি ফ্রি থ্রো দেওয়া হবে। যাকে ফাউল করা হয়েছে তিনিই ফ্রি থ্রো মারবেন।
কলাকৌশল : ভালো বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের জন্য দরকার দম, ক্ষিপ্রতা, গতি ও লাফ দেওয়ার ক্ষমতা।
১. দাঁড়াবার ভঙ্গি : সুবিধেমতো দুই পা ফাঁক করে দুই পায়ে সমান ভর করে দাঁড়াতে হবে। হাঁটু সামান্য ভেঙ্গে শরীরের উপরের অংশ বাঁকিয়ে দুই হাত বুকের কাছাকাছি উঁচু করে ধরে রাখ। কনুই দুইটি নিচের দিকে থাকবে।
২. বল ধরা : বল এমনভাবে ধরতে হবে যেন বলটা নিজের আয়ত্ত্বে থাকে। বল ধরার সময় আঙ্গুলগুলো ছড়িয়ে বুড়ো আঙ্গুলগুলোই বলকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। হাতের তালু দিয়ে বল ধরা ঠিক নয়।
৩. বল পাস দেওয়া : বল পাস দেওয়ার সময় মনে রাখতে হবে যে, এ সময় কব্জি ও কনুই শরীরের অন্যান্য অংশ থেকে অনেক বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। বল পাস দেওয়ার সময় এক পা সামনে ও অপর পা পিছনে থাকে। বাস্কেটবল পাস দেওয়া হয় সাধারনত -
ক. চেস্ট পাস : বুক বরাবর দ্রুত পাস দেওয়া।
খ. মাথার নিচ দিয়ে পাস দেওয়া : খুব কাছাকাছি দ্রুত পাস দেওয়ার জন্য এ পাসের প্রয়োজন হয়।
গ. হুক পাস : বিপক্ষ থেকে দূরে বা তাদের মাথার উপর দিয়ে এ পাস দিতে হয়। সাধারনত একহাত দিয়ে পাস করতে হয়।
ঘ. বাউন্স পাস : বল ধরে সর্তীথ খেলোয়াড়ের কাছে কোর্টে ড্রপ দিয়ে পাস দিতে হয়।
ঙ. মাথার উপর দিয়ে পাস : খেলোয়াড় কাছে থাকলে মাথার উপর দিয়ে বল পাস দিতে হয়।
৪. ড্রিবলিং : জায়গা পরিবর্তন বা সামনে আগাবার জন্য ড্রিবলিং করতে হয়। একহাত দিয়ে বা পর্যায়ক্রমে ডান বা বাম হাত দিয়ে বা বারবার কোর্টে ড্রপ দেওয়াকে ড্রিবলিং বলে। বলে চাপ দেওয়ার সময় হাতের আঙ্গুলগুলো খোলা থাকবে এবং আঙ্গুল দিয়ে বলকে চাপ দিতে হবে।
৫. পিভটিং : পায়ের উপর ঘোরাকে পিভটিং বলে। একটি পা একই জায়গায় রেখে অন্য পা-টিকে যে কোনো দিকে যতবার ইচ্ছে ঘুরিয়ে নেওয়াকে পিভটিং বলে।
৬. শ্যুটিং : বাস্কেটে বল ছোড়াকে শ্যুটিং বলে। বাস্কেটে  সরাসরি শ্যূাট করা যায় আবার বোর্ডে লাগিয়ে ও গোল করা যায়।
ক. সেট শ্যুট : এক জায়গায় বা দাঁড়ানো অবস্থায় যে শ্যুট করা হয় তাকে সেট শ্যুট বলে। এ শ্যুট এক হাত বা দুই হাত দিয়ে করা যায়। এক হাত দিয়ে শ্যুট করার সময় যে হাত দিয়ে শ্যুট সে হাত বলের পিছনে থাকে। অন্য হাত বলের পাশে সাপোর্ট হিসেবে থাকে। দুই হাত দিয়ে শ্যূট করার সময় উভয় হাতই বলের পিছনে থাকবে।
লেআপ-শট : কাছ থেকে গোল করার জন্য সাধারণত এ শট করা হয়। এ শট করার সময় খেলোয়াড় ড্রিবলিং করতে করতে এগিয়ে যায় এবং এক পা দিয়ে জোরে মেঝেতে আঘাত করে শরীর উঁচুতে তুলে নেয় এবং যে হাত দিয়ে বল মারবে সে হাত সম্পূর্ণ সোজা করে দিয়ে বল সরাসরি বাস্কেটে ঢুকায় বা বোর্ডে মেরে বাস্কেটে ঢোকায়।